সূচনা:
সন্ধ্যা নদীর কোলঘেঁষা প্রাকৃতিক সবুজের লীলা ভূমি সারেংকাঠী ইউনিয়ন। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ আর গাছ-গাছালির সমারোহে অনন্য এ ইউনিয়ন। বৈচিত্রে ভরপুর সারেংকাঠী ইউনিয়নের উত্তরে সোহাগদল ইউনিয়ন, দক্ষিণে গুয়ারেখা ইউনিয়ন, পশ্চিমে দৈহারী ও গুয়ারেখা ইউনিয়ন এবং পূর্বে সন্ধ্যানদী ও সমুদয়কাঠী ইউনিয়ন।
১৯৭৩ সালে দৈহারী ইউনিয়নের অংশ বিশেষ নিয়ে সারেংকাঠী গ্রামের নামানুসারে এ ইউনিয়নের নাম সারেংকাঠী ইউনিয়ন রাখা হয়।
ইউনিয়নের মোট আয়তন ৩২৯৯ একর বা প্রায় ৫ বর্গকিলোমিটার, যা নেছারাবাদ উপজেলার ৮.৪১%। এটি নেছারাবাদ উপজেলায় জনসংখ্যার দিক দিয়ে ৮ম এবং আয়তনে ৭ম। ২০০১সালের আদমশুমারী অনুসারে এ ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ১২,৮০২।
ইউনিয়নটিতে মোট মৌজার সংখ্যা ৭টি এবং গ্রামের সংখ্যা ১৩টি।
অত্র ইউনিয়নটি ভৌগোলিক দিক দিয়ে অন্তবর্তী উপকূলীয় এলাকার অন্তর্গত।
ইউনিয়নের অবস্থাণ:
ভালদিক:
দুর্বলদিক:
প্রকৃতি ও পরিবেশ:
অসংখ্য নালা/খালে বিভক্ত ছোট আয়তনের সারেংকাঠী ইউনিয়নটি পলল ভূমি দ্বারা গঠিত। জোয়ার-ভাটার প্রাকৃতিক নিয়মে ভূমির উর্বরতা যেমন অনেক বেশী, ঠিক তেমনি অনুকুল আবহাওয়ায় অতি সহজে লতা-গুল্ম, ফুল-ফল, শষ্য-বৃক্ষ জন্মায়। প্রকৃতির অপার উদারতায় সারেংকাঠী ইউনিয়ন সবুজের সমারোহে সুশোভিত। সমগ্র ইউনিয়ন যেন বৃক্ষচ্ছাদিত অরণ্য, মানুষের নিপুণ হাতে সাজিয়ে তোলা, যার প্রান্তরে প্রান্তরে শুধু সবুজের ছোঁয়া।
জলবায়ু: এ এলাকার জলবায়ু গ্রীষ্মমন্ডলীয়। এখানকার আবহাওয়া বেশ গরম ও আর্দ্র। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা আগষ্ট থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত প্রায় ৪৪% এবং মার্চ থেকে আগষ্ট পর্যন্ত প্রায় ৭৭% থাকে। বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ১৯১ সেন্টিমিটার। জুন থেকে আগষ্ট পর্যন্ত প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
মাটি: এ ইউনিয়নের মাটি মূলত ২ ধরনের।
(ক) পদ্মা-মেঘনা অববাহিকার লবণ বিহীন পলি-কাদা-মাটি ও
(খ) জলোচ্ছাসের ফলে মৃদু লবনাক্ত পলি-কাদা-মাটি।
নদী: এ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে কোন নদী প্রবাহিত নেই। তবে পূর্ব সীমানার সন্ধ্যা নদী এবং এর সাথে কয়েকটি বড়-বড় খাল সংযোগ থাকায় সারা বছর ইউনিয়নের প্রতিটি খাল-নালায় জোয়ার-ভাটার পানি প্রবাহিত হয়।
বন: এ ইউনিয়নে কোন নির্দিষ্ট বনভূমি নেই। তবে প্রতিটি বাড়ীতে প্রচুর পরিমানে গাছ-গাছালি আছে। দূর থেকে মনে হবে যেন বনভূমি।
জীব বৈচিত্র:
উদ্ভিদ: এখানে প্রতিটি বাড়ীতেই প্রচুর পরিমান গাছ-পালা আছে। বাড়ীতে জন্মানো গাছের মধ্যে আম, গাব, জাম, তাল, তেঁতুল, কাঁঠাল, জলপাই, বেল, চালতা, বরই, পেয়ারা, লিচু, নারিকেল, সুপারি, কামরাঙ্গা, আতা, হরিতকী ও আমলকী অন্যতম। এ ছাড়া অনেক লোকই কলার চাষ করে থাকেন।
কৃষি জমিতে বিভিন্ন জাতের শস্য, যেমন- স্থানীয় ও উচ্চফলনশীল জাতের ধান, পাট, দেশীয় রোপা ধান, শাক-সব্জী, ডাল, তৈলবীজ, কলা ও পান চাষ করা হয়। আবাদী জমির প্রায় ৮৬% জমিতে ধান চাষ হয়।
স্থানীয় গাছের মধ্যে কড়ই, শীল কড়ই, রেইট্রি, জারুল, শিমুল অন্যতম। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিদেশী গাছ যেমন-টিক, চাম্বল, মেহগনি, শিশু, ইউক্যালিপটাস, বাবলা, পাইন লাগানো হচ্ছে।
প্রাণী:
*পশু:অনুকুল পরিবেশ ও প্রাকৃতিক বনের অভাবে এ জেলায় বড় বা মাঝারি ধরনের কোন মাংসাশী প্রাণী দেখা যায় না। তবে শিয়াল, খেঁকশিয়াল, বাগডাস, উদবিড়াল, কাঠ বিড়াল, বেজী, গুঁইসাপ, বিভিন্ন প্রকার ইঁদুর ও বাঁদুড় দেখা যায়। জনসচেতনার অভাবে এর অনেক গুলোই বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে।
*পাখি:সারা দেশের মতো এখানেও প্রায় সব ধরনের পাখিই দেখা যায়, যাদের মধ্যে বাজ, চিল, কানি বগা, গো বগা, কালা বগা, কাক ও মাছ রাঙ্গা অন্যতম। এদের পাশাপাশি দোয়েল, কোকিল, হলদি পাখি, ফিঙ্গে, শালিক, বুলবুল, টুনটুনি, শ্যামা, বাবুই, কবুতর ও ঘুঘু দেখা যায়।
*মাছ:বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির মাছ এখানে পাওয়া যায়। জনপ্রিয় মাছগুলো হল- রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, আইড়, টেংরা, মাগুর, শিং, শোল, বোয়াল, গজার, পাবদা, কই, মুড়লা, পুটি, বাইন, চেলা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি কার্প জাতীয় মাছ, তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, পাংগাস পুকুর ও দীঘিতে চাষ করা হয়।
কৃষি সম্পদ:
কৃষি সম্পদ: ইউনিয়নের জমির একটি বৃহৎ অংশই কৃষি আবাদের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। মোট জমির ৮৬% জমিতে ধান চাষ হয়।
সমন্বিত চাষ:কৃষি নির্ভর এ ইউনিয়নের চাষাবাদের একটি বৈচিত্র হচ্ছে সমন্বিত চাষ। এ চাষের ধরণ হচ্ছে একখন্ড জমির চর্তুদিকে লম্বালম্বি পরিখা খনন করে, পরিখার মাটি দিয়ে জমির মাঝের অংশটা উঁচু করা হয়। যাতে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ডুবে না যায়। এ চাষের ক্ষেত্রে দেখা যায় একই জমিতে সারা বছর বিভিন্ন রকমের ফসল হয়ে থাকে। যেমন- পেয়ারা, আখ, কচু, শীতকালীন সব্জি, মরিচ, সীম ইত্যাদি। পরিখায় প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এ ধরনের তৈরিকরা চাষযোগ্য জমিকে কান্দি বলে।
প্রধান অর্থকরী ফসল:অর্থকরী ফসলের মধ্যে রয়েছে নারিকেল, সুপারি, কলা, পেয়ারা, আখ ইত্যাদি। শীতকালে প্রচুর ফুট, বাঙ্গি, তরমুজের চাষ হয়।
নার্সারী:গাছের চারা উৎপাদনে ব্যাপক বেসরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন উদ্যোগ রয়েছে। এসব নার্সারীতে বাংলাদেশের সকল প্রকার অর্থকরী গাছের চারা পাওয়া যায়।
পশুসম্পদ:
ইউনিয়নের বেশীর ভাগ গৃহস্থই হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল লালন-পালন করে। কৃষি শুমারী অনুযায়ী দেখা যায় প্রতিটি খানায় গড়ে ৩.০৪টি গবাদি পশু রয়েছে। বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ব্যবসা হচ্ছে মুরগীর খামার এবং একই সাথে মৎস্য চাষ। অর্থাৎ পুকুরে বা জলাশয়ের উপর ঘর তৈরী করে তাতে মুরগী পালন করা হলে একই খাবারে মুরগীর পাশাপাশি মাছের চাষ হচ্ছে।যাতে করে মাছের জন্য আলাদা খাবার দেয়ার দরকার না পড়ায় সমন্বিত মুরগী-মৎস্য চাষ অধিক লাভজনক। ইউনিয়নের অনেক অবস্থাপন্ন কৃষক স্বল্প প্রশিক্ষণ নিয়ে মুরগীর ফার্ম করে প্রচুর পরিমানে লাভবান হচ্ছেন।
দুর্যোগ:
সারেংকাঠী ইউনিয়নটি প্রকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হিসাবে পরিচিত। সাইক্লোন, জলোচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও পাটি-মাটির লবনাক্ততা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসাবে চিহ্নিত।
সাইক্লোন, জলোচ্ছাস, ভরা জোয়ার, বন্যা, মাটি ও পানির লবনাক্ততা, নদী ভাঙ্গন, বন উজাড়, পরিবেশ দূষণ, নদী-খাল ভরাট, আর্সেনিক এ এলাকার জনগণকে বিপদাপন্নতার মধ্যে রেখেছে।
উপসংহার:
সর্বোপরি সীমিত সম্পদ বা জমি, কৃষি যন্ত্রপাতির অভাব, দ্বন্ধ-সংঘাত, অর্থের অভাব ইত্যাদি সামাজিক বিপদাপন্নতার কারণ। দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দস্যুবৃত্তি, অর্ভাভাব, মহাজনী বা দাদন ব্যবসা গ্রামীন জনসাধারনের উপর বোঝা হয়ে পড়েছে। গ্রামীন শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহের অন্তরায় হচ্ছে তাদের কাজের অভাব, মজুরি শোষণ, ভগ্ন বা রুগ্ন স্বাস্থ্য, অর্থাভাব, সুপেয় পানি ও পয়:সুবিধার অভাব, আয়ের উৎস্য কমে যাওয়া ইত্যাদি।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS